কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায়
বিভিন্ন কারণে মানুষের জ্বর হয়ে থাকে। অনেকের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে জ্বর হয় বা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে জ্বর হয়ে থাকে। এই জ্বরের সঠিক চিকিৎসা না হলে পরবর্তীতে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন বড়দের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ, কত ডিগ্রি তাপমাত্রা হলে জ্বর হয়, বাচ্চাদের কত ডিগ্রি তাপমাত্রাকে জ্বর বলে, মানুষের জ্বর সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি হতে পারে, ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ, ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ, জ্বর হলে গোসল করা যাবে কি, জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত, কত ডিগ্রি জ্বর হলে সাপোজিটরি দিতে হয়, কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায়, জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায়
বড়দের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। অনেক সময় শরীরের ভিতরে মারাত্মক বা প্রাণঘাতি রোগের লোকজন আসতে পারে। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলঃ
১.ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের ফলে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
২.জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে ঠান্ডা বা গরমের কারণে জ্বর আসতে পারে।
৩.বিভিন্ন ধরনের পেটে সংক্রমণ যেমন - অতিরিক্ত পেটে ব্যথার কারণে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৪.এডিস মশার কামড়ের ফলে জ্বর আসতে পারে। এই জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর বলা হয়।
৫.রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর কারনে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৬.ফুসফুসে ইনফেকশন বা কিডনিতে সমস্যা জনিত কারণে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৭.শরীরে অতিরিক্ত রক্ত কমে গেলে বা রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৮.ফ্লু, চিকেন পক্স, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া রোগের কারণে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
উপরোক্ত ও কারণগুলোর জন্য ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। তাই ঘন ঘন জ্বর আসলে দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
কত ডিগ্রি তাপমাত্রা হলে জ্বর হয়
অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এই প্রশ্নটা থাকে যে তাপমাত্রা কত ডিগ্রী হলে জ্বর হয়। আমাদের আজকের এই পোস্টটি পড়লে আপনারা এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৬.৫–৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৬.৮–৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট।যদি শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে বেশি হয় তাহলে জ্বর বলে ধরা হয়।যেমন শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী বা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি হলে জ্বর বলা হয়।
বাচ্চাদের কত ডিগ্রি তাপমাত্রাকে জ্বর বলে
প্রত্যেকটা মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে বেশি তাপমাত্রা হলে তাকে জ্বর বলে ধরা হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি বা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে তাকে জ্বর বলে ধরা হয়।
মানুষের জ্বর সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি হতে পারে
বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ জানে না যে জ্বর সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে জ্বর ১০৪ ডিগ্রি থেকে ১০৫ ডিগ্রী হলে এটা সর্বোচ্চ জ্বর। তবে জ্বর ১০৭ ডিগ্রী থেকে ১০৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।সাধারণত ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হলে জ্বর ১০৭ ডিগ্রি থেকে ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে। অনেক সময় জ্বর ১০৮ ডিগ্রির উপরে উঠলে মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে।
ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ
অনেক সময় বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে যার আসতে পারে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। নিচে যে রোগের লক্ষণ হিসেবে জ্বর আসতে পারে সেই লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ
১.ফুসফুসে ইনফেকশন, লিভারে ইনফেকশন বা কিডনিতে সমস্যা হলে এর লক্ষণ হিসেবে জ্বর আসতে পারে।
২.ম্যালেরিয়া বা কালা জ্বর এর লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৩.টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসলে পারে।
৪.রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৫.শরীরের কোথাও যদি ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হয় তার লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৬.ঠান্ডা সমস্যা থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন হলেই ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৭.ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
৮.ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে।
উপরোক্ত রোগের লক্ষণ হিসেবে ঘন ঘন জ্বর আসতে পারে। তাই ঘন ঘন জ্বর আসলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ
অধিকাংশ মানুষ সব থেকে বেশি ভাইরাস জ্বরের আক্রান্ত হয়। এই জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যে লক্ষণ গুলো দেখলে বোঝা যায় যে ভাইরাস জ্বরের আক্রান্ত হয়েছে। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ
১.অতিরিক্ত জ্বর হয় এবং ঘন ঘন জ্বর হওয়া।
২.জ্বর ৫ থেকে ৭ দিন বা ২ সপ্তাহ স্থায়ী হওয়া।
৩.শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হওয়া।
৪.জ্বরের সাথে তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হওয়া।
৫.শরীরের দুর্বল অনুভূত হওয়া।
৬.জ্বরের সাথে প্রচন্ড গলা ব্যথা হওয়া।
৭.নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া নাক দিয়ে পানি পড়া ।
৮.শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে বা মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া।
৯.বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
১০.হঠাৎ হঠাৎ শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
১১.ক্ষুধা কমে যাওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলি ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ হতে পারে। তাই গুরুত্ব লক্ষণগুলি দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
জ্বর হলে গোসল করা যাবে কি
জ্বর হলে গোসল করলে জ্বর আরো বেড়ে যায় এটা অনেকের মনের ভ্রান্ত ধারণা। তবে জ্বর হলে গোসল করা যাবে। গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। যার ফলে জ্বর কমে যেতে পারে।এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে এবং চুল যত দ্রুত সম্ভব শোকাতে হবে। কারণ চুল ভেজা থাকলে পরবর্তীতে আবার ঠান্ডা লেগে জ্বর আসছে পারে জ্বর আসতে পারে।
জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত
জ্বর হলে শরীরের দুর্বলতা অনুভূত হয় বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার তালিকার ওপরে গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় খাবার রুচি কমে যায়। তার জন্য রুচিসম্মত এবং পুষ্টিগুণসম্মত খাবার খেতে হবে।
১.জ্বর হলে যেহেতু শরীর দুর্বল হয়ে যায় তাই যে সময় প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন- বাদাম, মটরশুটি, ছোলা, মাশরুম, ডাল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যা শরীরে চাহিদা পূরণ করে এবং দুর্বলতা কমায়।
২.জ্বর হলে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- বিভিন্ন ধরনের স্যুপ ,ডাবের পানি বা ফলের জুস ইত্যাদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীর সাতেজ রাখতে সাহায্য করে।
৩.প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ এবং টাটকা শাকসবজি এবং ফলমূল রাখতে হবে। যা শরীরে ভিটামিন সি জোগাতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে সাথে শরীরে দুর্বলতা কমায়।
৪.জ্বর হলে আদা চা খাওয়া যেতে পারে। আদা শরীরের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।
কত ডিগ্রি জ্বর হলে সাপোজিটরি দিতে হয়
জ্বর সাধারণত ১০০ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকলে প্যারাসিটামল বা নাপা খেলে জ্বর কমে যেতে পারে। তবে যদি জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা বেশি হয় তাহলে জ্বর কমানোর জন্য সাপোজিটরি দিতে হয়।
কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায়
সাধারণত জ্বর হলে মানুষ মারা যায় না। তবে জ্বর যদি ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয় বা তার বেশি হয় তাহলে মানুষ মারা যেতে পারে। সাধারণত কালাজ্বর বা ম্যালেরিয়া জ্বর হলে জ্বর ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা হতে পারে।
জ্বর হলে করণীয়
জ্বর হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে কি করতে হবে বা কি করলে জ্বর দ্রুত কমে যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া ভাবে কয়েকটি নিয়ম কানুন মেনে চললেই জ্বর দ্রুত কমে যেতে পারে।
১.জ্বর আসলে বন্ধ ঘরে না থেকে আলো বাতাস চলাচল করে এমন খোলামেলা জায়গায় থাকতে হবে।
২.জ্বর অতিরিক্ত আসলে ঘন ঘন হাত পা ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে বা হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। এতে করে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় ফলে জ্বর দ্রুত কমে যায়।
৩.বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। তাই আগে কি কারণে জ্বর এসেছে সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
৪.জ্বর হলে শরীরে দুর্বলতা অনুভূত হয় বা ঘন ঘন জ্বর আসা বা যাওয়ার ফলে শরীর ঘেমে যায়। ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৫.জ্বর হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বা শরীরে দুর্বলতা অনুভূত হয়। তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, প্রোটিন, আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে। এতে করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং দ্রুত জ্বর কমে যাবে।
৬.জ্বর হলে প্রাথমিক পর্যায়ে প্যারাসিটামল বা নাপা খেতে হবে। যদি জ্বর ৩ দিন বা ৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয় । তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খেতে হবে।
সর্বোপরি জ্বর মানুষের কমন রোগে পরিণত হয়েছে। এমন কোন মানুষ নেই যে এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বরের উৎস বের করতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা করলে জ্বর কমে যায়। তাই আমাদের তাই আমাদের জ্বর আসলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
Post a Comment
0Comments