ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে
গ্রীষ্মকালীন বা বর্ষা মৌসুম আসলেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা বেড়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। তাই আমাদের আজকের এই প্রশ্নের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়,ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ,ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে,ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না, ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়, ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের উপায়, ডেঙ্গু কখন বিপদজনক, ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়
ডেঙ্গু জ্বর মূলত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তিন দিনের বেশি এক জায়গায় ময়লা পানি জমে থাকলে এডিস মশা জন্মায়।এডিট মশা কামড়ের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলোঃ
১.ডেঙ্গু জ্বরের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর ১০১ ও ১০২ এর উপরে থাকা।
২.জ্বর একটানা থাকা বা ঘাম ছেড়ে দিয়ে জ্বর আসা।
৩.জ্বরের সাথে অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হওয়া।
৪.অতিরিক্ত মাথা ঘোরা।
৫.চোখের পিছনে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৬.বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া।
৭.পেটে ব্যথা হওয়া।
৮.মাংসপেশিতে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
৯.শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
১০.অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হওয়া।
১১.ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেওয়া।
১২.শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়া।
১৩.দাতের মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্তপাত হওয়া।
১৪.প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত হওয়া।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
এডিস মশা কামড়ানোর ০৩ থেকে ০৭ দিন বা ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয় এবং এই জ্বর ০২ সপ্তাহ থেকে ০৩ সপ্তাহ স্থায়ী থাকে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
অধিকাংশ মানুষ মনে করে ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে না । তবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে। তবে যদি অতিরিক্ত জ্বর হয় তাহলে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল না করে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা উত্তম। যেহেতু ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল অতিরিক্ত জ্বর হওয়া। তাই জ্বর হলে ঘন ঘন মাথা বা হাত পা মুছে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে জ্বর দ্রুত কমে যেতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রতিদিনের খাবার তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে পানি শূন্যতা সমস্যা দেখা দেয় তাই এমন সব ধরনের খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে যে খাবারগুলো শরীরে পানি শূন্যতা কমাতে সাহায্য করবে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে নিচে কয়েকটি খাবারের নাম দেওয়া হলো যে খাবার গুলোডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দিতে হবে।এ সময় রোগীকে বেশি বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো উত্তম।
১. ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২.ডেঙ্গু জ্বর ফলে বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস, ডাবের পানি, স্যুপ খেতে হবে।এগুলো শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে এবং শরীরের দুর্বলতা কাটতে সাহায্য করে।
৩.ডেঙ্গু জ্বর হলে তরল জাতীয় খাবার যেমন জাউ ভাত, সুজি, ভাতের মাড় ইত্যাদি খাওয়াতে হবে কারণ এ সময়ে হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। আর এসব খাবার দ্রুত হজম হয়।
৪.ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ক্ষয় হয়। তাই ক্যালরি এর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য দুগ্ধজাত খাবার যেমন- দুধ,পায়েস, দই, মিষ্টি, মিল্কশেক, পুডিং ইত্যাদি খেতে হবে।
৫.ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- ডিম,মাছ,চর্বি হীন মাংস খেতে হবে।
৬.ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় তাই প্লাটিলের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কলিজা ডিম বেদানা কুমড়োর বিচি কিসমিস খেজুর ইত্যাদি খেতে হবে।
৭.ডেঙ্গু জ্বর হলে খাবার স্যালাইন খুবই জরুরী । এ সময় ডেঙ্গু রোগীকে খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
৮.এছাড়াও রোগী যদি এই স্বাভাবিক খাবার খেতে পারে তাহলে রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে।
ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না
ডেঙ্গু জ্বর হলে কয়েকটি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো ডেঙ্গু জ্বরের রোগীরা খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে খাবার গুলোর নাম দেওয়া হলোঃ
১.ডেঙ্গু জ্বর হলে অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২.ডেঙ্গু জ্বর হলে অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বা সফট ড্রিংকস বা কোমল পানিও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.ডেঙ্গু জ্বর হলে অতিরিক্ত চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও এ সময় অ্যালকোহল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
৪.ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর হলে আগে ডেঙ্গু এনেসন এবং ডেঙ্গু আইজিডিআইজিএম এবং সিবিসি(CBC) টেস্ট করানোর মাধ্যমে সিওর হতে হবে যে ডেঙ্গু হয়েছে কি না। যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু মাত্র প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রতিদিন সিবিসি(CBC) টেস্ট করে দেখতে হবে টোটাল কাউন্ট(Total Count) এবং প্লাটিলেট কাউন্ট(Total Count) পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কি না। যদি টোটাল কাউন্ট(Total Count) এবং প্লেটিলেট কাউন্ট (Platelet Count) কমে যায়। তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন দিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের উপায়
সর্তকতা অবলম্বন করলেই সহজেই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব ।ডেঙ্গু যাওয়ার প্রতিরোধ করার জন্য অবশ্যই রাতে মশারি টা নিয়ে ঘুমাতে হবে এবং বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোথাও যেন তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে সহজেই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডেঙ্গু কখন বিপদজনক
ডেঙ্গু জ্বর তখনই বিপদজনক হয় যখন শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ দ্রুত কমে যেতে থাকে সাথে টোটাল কাউন্ট কমে যেতে থাকে। মানুষের শরীরে প্লাটিলেটের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে দেড় লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত । যদি ডেঙ্গু জ্বর হলে এই প্লাস্টিলেট কমে ৪০ হাজারের নিচে নেমে আসে। তাহলে ডেঙ্গু জ্বর বিপদজনক হতে পারে এবং এর কারণে মৃত্যু হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণ প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে হবে।ডেঙ্গু জ্বর হলে এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এন্টিবায়োটিক ওষুধ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে মৃত্যু হতে পারে।যদি শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যায় বা টোটাল কাউন্টার পরিমাণ কমে যায়। তাহলে ব্লাড দিতে হবে এতে করে শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এছাড়াও নরমাল স্যালাইন দিতে হবে।
সর্বোপরি গ্রীষ্মকালীন এবং বর্ষা মৌসুম আসলেই এই ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই বর্ষা মৌসুম আসলে মশারি টানিয়ে ঘুমানো এবং বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাহলে সহজেই আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারব এবং নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে পারব।
Post a Comment
0Comments