কিশোরীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
বর্তমানে অধিকাংশ কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এই আয়রনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি হয়,কিশোরীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়, আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা, আয়রন ট্যাবলেট কত মাস থেকে খেতে হয়, আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মাসিক হয়, আয়রন ট্যাবলেট বেশি খেলে কি হয়, আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি পায়খানা কালো হয়, আয়রন ট্যাবলেট কি ছেলেরা খেতে পারে এবং আয়রন ট্যাবলেট এর নাম সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেল আলোচনা করব কিশোরীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি হয়
শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যায় ।যেহেতু হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে । তাই শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আয়রন ট্যাবলেট খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি কমে। যার ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে বা রক্তশূন্যতা কমে যায়।
কিশোরীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
অনেক সময় কিশোরীদের বয়সন্ধিকালে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এ সময় আয়রনের ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আয়রনের ট্যাবলেট খাওয়ার আগে অবশ্যই কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যেহেতু আয়রনের ঘাটতির কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তাই শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত আছে সেটা সঠিকভাবে পরিমাপ করে তারপরে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত।
যদি হিমোগ্লোবিন অনেক কম থাকে তাহলে দৈনিক দুইবার বা তিনবার আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। আয়রন ট্যাবলেট সবসময় খালি পেটে খেতে হয় । তাই আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা আগে খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে বেশি শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রনের ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। তবে গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেটের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের ওষুধ খাওয়া হয়। তাই আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ওষুধ একসাথে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আয়রনের ট্যাবলেট সবসময় খালি পেটে খেতে হয়। তাই আয়রন ট্যাবলেট খাবার আধাঘন্টা তে এক ঘন্টা আগে খেতে হবে। আয়রন ট্যাবলেট সাধারণত দুপুরে বাড়াতে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই আয়রন ট্যাবলেট যদি দুপুরে খাওয়া হয় তাহলে সকালে ক্যালসিয়ামের ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্যালসিয়ামের ওষুধ তখন রাতে খাওয়া যেতে পারে।
আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়
আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় অনেকেই মনে করেন যে আয়রন ট্যাবলেট খেলে মোটা হয়। তাই অনেকেই এই আয়রন ট্যাবলেট খেতে চাই না। তবে আয়রন ট্যাবলেট খেলে মোটা হয় না। আয়রন ট্যাবলেট শরীরে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতার ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। তাই নিশ্চিন্তেই আয়রনের ঘাটতি কমানোর জন্য আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা
আয়রন ট্যাবলেট শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মূলত এটি আয়রনের ঘাটতি কমানোর জন্য কাজ করে।
১.শরীরের রক্তশূন্যতা কমাতে বা আয়রনের ঘাটতি কমাতে আয়রন ট্যাবলেট খুবই উপকারী।
২.আয়রন ট্যাবলেট শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিলে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
৩.গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খুবই উপকারী কারণ গর্বের শিশুর এবং গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা বা গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য আয়রন ট্যাবলেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪.গর্ভাবস্থায় শিশু সঠিক বিকাশের জন্য আয়রন ট্যাবলেট খুবই উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসাক গর্ভবতী মায়েদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আয়রন ট্যাবলেট কত মাস থেকে খেতে হয়
শরীরে আয়রনের ঘাটতি কমানোর জন্যই মূলত আয়রনের খাওয়া হয়। যেকোনো সাধারণ নারী বা পুরুষের আয়রন ট্যাবলেট অন্ততপক্ষে তিন মাস খেতে হয়। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের প্রথম তিন মাসের পর থেকে ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত আয়রন ট্যাবলেট খেতে হয়।
আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মাসিক হয়
অনেক সময় আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতার কারণে নারীদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই যদি আয়রন ট্যাবলেট টানা তিন মাস খাওয়া হয় তাহলে মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যায় বা নিয়মিত হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট খেলে মাসিক হয়ে যেতে পারে।
আয়রন ট্যাবলেট বেশি খেলে কি হয়
আয়রন ট্যাবলেট শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে এই আয়রন ট্যাবলেট যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত মাথায় আয়রনের ট্যাবলেট খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে বা শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।এছাড়াও অতিরিক্ত মাথায় আয়রন ট্যাবলেট খেলে শরীরের রক্তচাপ কমে যেতে পারে বা লিভার বা পাকস্থলীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে মৃত্যু হতে পারে।
আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি পায়খানা কালো হয়
আয়রন ট্যাবলেট শরীরে রক্তশূন্যতা বা আয়রনের ঘাটতি কমানোর সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও আয়রনের ট্যাবলেট খেলে পায়খানা কালো হয়ে যেতে পারে।
আয়রন ট্যাবলেট কি ছেলেরা খেতে পারে
অনেকেই মনে করেন শুধু আয়রনের ট্যাবলেট নারীরা খেতে পারেন। তবে আয়রনের ট্যাবলেট ছেলেরাও খেতে পারে। যদি কোন ছেলেদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে চিকিৎসক তাকে আয়রনের ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আয়রন ট্যাবলেট এর নাম
আয়রন ট্যাবলেট শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আয়রনের ঘাটতি কমানোর জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আয়রন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত। তবে আয়রনের ট্যাবলেট খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নিচে আয়রনের ট্যাবলেট এর নাম দেওয়া হলোঃ
- Tab. Folvit (ফলভিট)
- Tab. Giffle M (জিফল এম)
- Tab. IPEC Plus (আইপেক প্লাস)
- Tab. Gifflet (জিফলেট)
- Cap. Zilvit (জিলভিট)
- Cap. Xvit(এক্সবিট)
- Tab. Feofal (ফিওফল)
- Tab. Ferrigan (ফেরিগান)
- Tab. Folneed (ফলনিড)
আয়রনের ঘাটতি কমানোর জন্য উপরোক্ত ট্যাবলেট গুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া যেতে পারে।
সর্বোপরি আয়রন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই আয়রনের ঘাটতির কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিন বা রক্তশূন্যতা সমস্যা দেখা দেয় বা শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই আমাদের সবসময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বা আয়রনের ঘাটতি কমানোর জন্য আয়রনের ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত।
Post a Comment
0Comments