বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়
সাধারণত ঠান্ডা সর্দি বা কাশির কারণে বুকে কফ জমে যায়।বুকে কফ জমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না যে বুকে কফ জমে গেলে কি কি সমস্যা দেখা দেয় বা বুকের কফ কিভাবে দূর করা যায়। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন বুকে কফ জমার কারণ, বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ, বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়, শিশুর বুকে কফ জমে যাওয়ার লক্ষণ, নবজাতকের ঠান্ডা লাগার লক্ষণ, বুকে কফ জমলে করণীয়, বাচ্চাদের বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাবো সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়
বুকে কফ জমার কারণ
অনেক সময় জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে গরম বা ঠান্ডা সমস্যা লেগে যায়। যার ফলে সাধারণ ফ্লু তে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় এই সাধারণ ফ্লু এর কারনে বুকে কফ জমে যায় ।এছাড়াও ফুসফুসে ইনফেকশন বা শ্বাসতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বুকে কফ জমে যেতে পারে।অনেক সময় নিউমোনিয়া দেখা দিলে বা ব্রঙ্কাইটিস এর সমস্যা দেখা দিলে বুকে কফ জমে যেতে পারে।
বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ
বুকে কাপ জমে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যা দেখে বোঝা যায় যে বুকে কফ জমে গেছে। নিচে সেই লক্ষণগুলো দেওয়া হলোঃ
১.ঘন ঘন কাশি হওয়া।
২.শ্বাসকষ্ট হওয়া।
৩.বুক ভার হয়ে থাকা বা বুকে চাপ অনুভূত হওয়া।
৪.কাশির সাথে কফ উঠা।
৫.নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৬.বুকের ভিতরে ঘড় ঘড় শব্দ হওয়া।
৭.শরীর ক্লান্ত বা দুর্বল হওয়া।
৮. জ্বর বা সর্দি হওয়া।
৯.মাথা ঝিমঝিম করা বা মাথা ভার হয়ে থাকা।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো বুকে কফ জমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে বুকে কফ জমে গেছে। তাই দ্রুত বুকের কফ উঠানোর চেষ্টা করতে হবে বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
বুকে কফ জমলে কি কি সমস্যা হয়
বুকে কফ জমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। কিন্তু অনেকেই জানে না যে বুকে কফ জমে গেলে শরীরে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিচে বুকে কফ জমে গেলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেই সমস্যাগুলো দেওয়া হলোঃ
১.যেহেতু শ্বাসতন্ত্রে ব্যক্তিদের বা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে বুকে কফ জমে যেতে পারে। তাই কফ জমে গেলে সবথেকে বড় সমস্যা হয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা।
২.নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা দেওয়া।
৩.ফুসফুসে ইনফেকশনের সমস্যা দেখা দেওয়া।
৪.যক্ষা রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া।
৫.সাধারণ ফ্লু যেমন- জ্বর, সর্দি বা কাশিতে আক্রান্ত হওয়া।
৬.অ্যাজমা কাশি বা হাঁপানির সমস্যা দেখা দেওয়া।
৭.ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা দেখা দেওয়া।
বুকে কফ জমে গেলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। তাই বুকে কফ জমে গেলে দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
শিশুর বুকে কফ জমে যাওয়ার লক্ষণ
শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় সহজেই তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা সাধারণত জ্বর, সর্দি বা কাশি বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার ফলে অনেকেরই বুকে কফ জমে যায়।কিন্তু শিশুদের বুকে কফ জমে যাওয়ার লক্ষণ সঠিকভাবে জানা না থাকার কারণে আমরা বুঝতে পারি না যে শিশুর বুকে কফ জমে গেছে। তাই নিচে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলোঃ
১.শিশুর ক্রমাগত কাশি হওয়া।
২.শিশুর বুকে গড়গড় শব্দ হওয়া।
৩.শিশুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়া।
৪.শিশুর বুকে ব্যথা হওয়া।
৫.শিশুর ক্ষুধা কমে যাওয়া।
৬.শিশুকে অতিরিক্ত দুর্বল বা ক্লান্ত দেখানো।
৭.শিশুর জ্বর বা সর্দির সমস্যা দেখা দেওয়া।
৮.শিশুর নিউমোনিয়া হাওয়া।
উপরোক্ত ও লক্ষণগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে শিশুর বুকে কফ জমে গেছে। তাই শিশুকে যথাসম্ভব উষ্ণ জায়গায় রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
নবজাতকের ঠান্ডা লাগার লক্ষণ
অধিকাংশ শিশুর ঠান্ডা সমস্যা থেকে নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
১.নাক দিয়ে পানি পড়া।
২.জ্বর বা কাশি হওয়া।
৩.চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
৪.ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া।
৫.নাক চোখ বা মুখে এলার্জি সমস্যা দেখা দেওয়া।
৬.ঠোট বা মুখ বারবার শুকিয়ে যাওয়া ।
৭.ঠোট বা মুখ বারবার শুকিয়ে যাওয়া ।
৮.নবজাতককে ক্লান্ত বা দুর্বল দেখানো।
৯.মাথা ব্যথা হওয়া।
বুকে কফ জমলে করণীয়
বুকে কফ জমে গেলে ঘরোয়া কিছু উপায়ে বুকের কফ সহজেই দূর করা যেতে পারে। নিচে কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলোঃ
১.বুকে জমে থাকা উঠানোর জন্য সবথেকে ভালো উপায় হলো উষ্ণ গরম পানি সাথে লবণ মিশিয়ে দিয়ে গারগেল করা। এই গারগাল করার মাধ্যমে বুকের কফ তরল হয়ে সহজে বাইরে বের হয়ে আসে।
২.বুকের জমে থাকা কফ উঠানোর জন্য গরম পানির ভাব নেওয়া যেতে পারে। এতে করে বুকের কফ তরল হয়ে যায় এবং সহজে উঠে যায়।
৩.বুকে জমে থাকা কফ সহজে উঠানোর জন্য আদা পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে সেটা হালকা কুসুম গরম অবস্থায় পান করা যেতে পারে। এতে করে গলার কফ সহজেই নরম হয়ে উঠে যেতে পারে।
৪.বুকের জমে থাকা কফ উঠানোর জন্য গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এতে করে বুকে জমে থাকা কফ নরম বা তরল হয়ে যায়।
৫.আপেল সিডার ভিনেগার বুকে জমে থাকা কফ উঠানোর জন্য খুবই কার্যকরী। বুকে অতিরিক্ত কফ জমে থাকলে আপেল সিডার ভিনেগার উষ্ণ গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে সহজেই বুকে কফ কমে যায়।
৬.উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করা এতে করে বুকে জমে থাকা কম সহজে নরম হয়ে যায় এবং উঠে যায়।
৭.বুকে কফ উঠানোর জন্য হলুদ খুব কার্যকরী। হলুদ শরীরের জন্য এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। হলুদ পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে হালকা কুসুম গরম অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। তাহলে সহজেই বুকে জমে থাকা কফ দূর হয়ে যেতে পারে।
৮.বুকে কফ জমে গেলে এ সময় তুলসী পাতা, পুদিনা পাতা বা দারচিনি, এলাচ লবঙ্গ, তেজপাতা দিয়ে ঘন ঘন চা খাওয়া যেতে পারে। এতে করে বুকে জমে থাকা কফ তরল হয়ে যায়।
বাচ্চাদের বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের বুকে কফ জমে গেলে বাচ্চাদেরকে যথাসম্ভব উষ্ণ জায়গায় রাখতে হবে এবং বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রামে রাখতে হবে। এছাড়াও বুকে কফ উঠার জন্য বাচ্চাকে বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। এ সময় উষ্ণ গরম স্যুপ বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী।এতে বাচ্চাদের কফ সহজেই উঠে যাবে।এ সময় বাচ্চাদেরকে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যেতে পারে।
বুকে কফ জমলে কি ঔষধ খাবো
বুকে এ কফ জমলে সেই কফ উঠানোর জন্য বাজারে ওষুধের ফার্মেসিতে বিভিন্ন ধরনের সিরাপ বা ওষুধ পাওয়া যায়। যেগুলো খেলে সহজেই বুকে কফ উঠে যায়। তবে যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসা কে শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
১.Tab.Monas ১০ - এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
২.Tab.Docopa -এই ওষুধটি শুষ্ক কাশি বা বুকে জমে থাকা কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
৩.Tab. Alkof Cofgel-এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
৪.Tab. Mucolyt-এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
৫.Syrup. Miracof-এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
৬.Syrup. Ambrox-এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
৭.Syrup. Re-Cof-এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
৮.Syrup. Tuspel-এই ওষুধটি কাশি বা বুকে কফ দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী।
হঠাৎ অতিরিক্ত কাশি বা বুকে অতিরিক্ত কফ জমে গেলে উপরোক্ত ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়া যেতে পারে। এতে করে সহজেই কাশি সমস্যা দূর হয় বা বুকে জমে থাকা কফ দূর হয়ে যায়।
সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে অনেক সময় ঠান্ডা বা গরম লেগে সর্দি-কাশি বা জ্বর হয়ে থাকে। ফলে অনেক সময় বুকে কফ জমে যায়। তাই আমাদের সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে যেন ঠান্ডা বা গরম লেগে বুকে কফ জমে না যায়।
Post a Comment
0Comments