বিড়াল কামড়ালে কয়টি ভ্যাকসিন দিতে হয়
বর্তমানে অনেকেই শখের কারণে বিড়াল পুষে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় এই বিড়ালকে সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া হয় না। যার ফলে বিড়াল যদি কামড় দেয় তাহলে অনেক সময় জলতাঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন বিড়াল কামড়ালে করণীয়,বিড়াল কামড়ালে কি রোগ হয়, বিড়ালের নখের আঁচড় কি বিপজ্জনক,বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়,বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম,বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়,বিড়াল কামড়ালে কয়টি ভ্যাকসিন দিতে হয়,বিড়াল কামড়ালে কি বাচ্চা হয়,রেবিস ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া,বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ,রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে,রেবিস ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায় সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব বিড়াল কামড়ালে কয়টি ভ্যাকসিন দিতে হয়
বিড়াল কামড়ালে করণীয়
হঠাৎ করে যদি বিড়ালে আঁচড় বা কামড় দেয় তাহলে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যে ক্ষত স্থানের গভীরতা কত । তারপর সেই অনুযায়ী ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।
১.বিড়ালে কামড়ালে বা আঁচড় দিলে সাথে সাথে ক্ষতস্থান গরম পানি বা এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
২.বিড়ালে কামড় বা আঁচড়ের ফলে যদি ক্ষতস্থান গভীর হয় বা রক্তপাত হয়। তাহলে সাথে সাথে কোন কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরতে হবে।
৩.বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বারবার ক্ষতস্থান পরিষ্কার পানি বা সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
৪.বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫.বিড়ালে কামড় বা আচঁড় দিলে ক্ষতস্থানে অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে।
৬.বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টিকা দিতে হবে।
বিড়াল কামড়ালে কি রোগ হয়
জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত বিড়াল কামড়ালে বা আঁচড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকে। তবে যদি বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়া থাকে। তাহলে আচঁড় বা কামড় দিলে জলাতঙ্ক হওয়া সম্ভবনা খুব কম থাকে। বিড়ালের মুখে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা বিড়ালের কামড় বা আতরের কামড়ের ফলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার ফলে মানুষের শরীরে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ নামে একটি রোগ দেখা দেয়। মূলত এই ব্যাকটেরিয়া বিড়ালের মুখে থাকলে বিড়ালের মধ্যে কোন ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না। তাই অবশ্যই বিড়ালে কামড় দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং টিকা নিতে হবে। এছাড়াও বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের ফলে শরীরে জ্বর জ্বর ভাব বা আক্রান্ত জায়গায় ব্যথা হওয়া বা যন্ত্রণা করা বা শরীর দুর্বল অনুভূত হতে পারে।
বিড়ালের নখের আঁচড় কি বিপজ্জনক
অনেকেই মনে করেন বিড়ালের নখের আঁচড় বিপদজনক। তবে সব বিড়ালের নখের আঁচড় বিপদজনক নাও হতে পারে। যদি ঘরে পোষা বিড়ালকে সঠিক সময়ে জলাতঙ্ক বা রেবিস ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়। তাহলে বিড়ালের কামড় বা আচঁড় শরীরের জন্য বিপদজনক হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে যদি বিড়ালকে সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া না হয়। তাহলে সেই বিড়ালের মধ্যে জলাতঙ্ক বা রেবিস ভাইরাস এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আর এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে যদি সেই বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দেয়। তাহলে শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়
বিড়ালের কামড় বা বিড়ালের নখের আঁচড়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
১.শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
২.শরীরে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৩.ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হতে পারে।
৪.জ্বর জ্বর ভাব লাগতে পারে।
৫.অনেক সময় বমি হতে পারে।
বিড়ালের নখের আঁচড় বা কামড়ালে উপরোক্ত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে। তাই বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং টিকা নিতে হবে।
বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম
বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে শরীরে জলতাঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই এই জলতাঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিড়াল কামড় দেওয়ার পরে ঠিকা দিতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম কি। বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের নাম হল জলতাঙ্ক বা রেবিস ভ্যাকসিন।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
বিড়ালের কামর বা আঁচড় দিলে আমরা অনেক সময় এই কামড় বা আঁচড়কে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে না নিয়ে দেরি করে টিকা দিতে যায়। তবে বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে যত দ্রুত সম্ভব টিকা দিতে দেওয়া উচিত। বিড়ালে কামড় বা আঁচড় দিলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা দেওয়া উত্তম। তবে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিকা দেওয়া যেতে পারে।
বিড়াল কামড়ালে কয়টি ভ্যাকসিন দিতে হয়
বিড়ালের কামর বা আঁচড় দিলে অবশ্যই টিকা দিতে হবে । আর এই টিকা দুটি পদ্ধতিতে দেওয়া হয় । একটি পদ্ধতি হলো চামড়ার নিচে ভ্যাকসিন দেওয়া এবং অন্য পদ্ধতি হলেও মাংসপেশীতে ভ্যাকসিন দেওয়া। এছাড়াও এই ভ্যাকসিনের ৩ ডোজ এর বা ৫ ডোজের মাধ্যমে দেওয়া হয়।৩ ডোজের মধ্যে ৩ টি টিকা এবং ৫ডোজের মধ্যে ৫ টি টিকা দেওয়া হয়।
১.একটি পদ্ধতিতে বিড়ালে কামড় দেওয়ার শূন্যতম দিনে একটি টিকা এবং তৃতীয়তম দিনে একটি টিকা এবং সপ্তম তম দিনে একটি টিকা দেওয়া হয়।
২.অন্য আরেকটি পদ্ধতিতে বিড়ালের কামড় দেওয়ার ০তম দিনে একটি টিকা ৩তম দিনে একটি টিকা ৭তম দিনে একটি টিকা ১৪তম দিনে একটি টিকা এবং ২৮তম দিনে একটি টিকা দেওয়া হয়।
৩.যদি যে বিড়ালের কামড় দেয় সেই বিড়ালকে পূর্বেই রেবিস ভ্যাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া হয় । তাহলে প্রথম পদ্ধতিতে তিনটি টিকা দিলেই হবে।
৪.ড্রাভিস ভ্যাকসিন দেওয়ার তিন মাস বা চার মাসের মধ্যে আবার কুকুর কামড়ালে পুনরায় টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫.এছাড়াও যদি এক বছরের ভিতরে কুকুর আবার কামড়ায়। তাহলে শূন্যতম দিনে একটি টিকা এবং বুস্টার ডোজ নিলেই হবে।
বিড়াল কামড়ালে কি বাচ্চা হয়
অনেকেই মনে করেন বিড়াল কামড়ালে বাচ্চা হয় । তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা বিড়ালে কামড় বা আঁচড়ের ফলে বাচ্চা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই।
রেবিস ভ্যাকসিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
শরীরে যেকোনো ধরনের টিকা বা ভ্যাকসিন দিলে সেই ভ্যাকসিনের টিকার কারণে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তেমনি রেবিস ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়ার পরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
১.জ্বর জ্বর ভাব হওয়া।
২.শরীরে দুর্বল অনুভূত হওয়া।
৩.টিকা দেওয়ার জায়গা ফুলে যাওয়া।
৪.টিকা দেওয়ার জায়গায় ব্যথা অনুভূত হওয়া।
৫.বমি বমি ভাব হওয়া।
৬.টিকা দেওয়ার জায়গায় চুলকানি হওয়া।
৭.মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেওয়া।
৮.ঘুমের ঘাটতি দেখা দেওয়া।
৯.ক্ষুধা কমে যাওয়া।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
বিড়ালের শরীরে রেবিস ভাইরাস প্রবেশ করলে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিচে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো যেগুলো দেখলে বোঝা যায় যে বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগ হয়েছে।
১.বিড়ালের গলার লিম্ফ নোড খুলে দেওয়া জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
২.বিড়ালের মধ্যে অস্থিরতা বা হাঁপানো জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৩.বিড়ালের মুখ থেকে লালা পড়া জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৪.বিড়ালের মধ্যে হঠাৎ করে আক্রমণ করার স্বভাব দেখা দিলে সেটি জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
রেবিস ভ্যাকসিন এর দাম বাংলাদেশে
মূলত বাংলাদেশে রেবিস ভ্যাকসিনের টিকা বিনামূল্যে যেকোনো সরকারি হাসপাতালে দেওয়া হয়। তবে যদি কেউ এই রেবিস ভ্যাকসিন কিনতে চায় তাহলে তাকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মত খরচ করতে হবে।
রেবিস ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায়
জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন বা রেবিস ভ্যাকসিন যেকোনো সরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায় এছাড়া কারণ এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হয় আর যদি রেবিস ভ্যাকসিন কিনতে হয়। তাহলে যেকোনো বড় ওষুধের দোকানে পাওয়া যেতে পারে। কারণ এই ভ্যাকসিনটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়।
সর্বোপরি বিড়ালের কামড় থেকে যেহেতু জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি হয় । তাই বিড়াল পোষার সময় অবশ্যই বিড়ালকে রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত এবং বিড়ালে কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব সরকারি হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেওয়া উচিত।
Post a Comment
0Comments