রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়
মানব দেহ বিভিন্ন রক্তকণিকা দিয়ে গঠিত । এই রক্ত কণিকার মধ্যে একটি হল প্লাটলেট বা অনুচক্রিকা। এটি আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাধার কাজে সাহায্য করে। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন প্লাটিলেট কমে যায় কেন, প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ, রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়, প্লাটিলেট বেশি হলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় প্লেটলেট কমে গেলে করণীয়, সুস্থ মানুষের প্লাটিলেট কত থাকে, প্লাটিলেট কত হলে রক্ত দিতে হয়, রক্তের প্লাটিলেট কত হলে মানুষ মারা যায়, কি খেলে রক্ত প্লাটিলেট বাড়ে এবং প্লাটিলেট দিতে কত সময় লাগে সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়
প্লাটিলেট কমে যায় কেন
শরীরের জন্য রক্তে প্লাটিলের স্বাভাবিক থাকা খুবই জরুরী। কারণ এই প্লাটিলেট শরীরে রক্তক্ষরণ হতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই আমাদের শরীরে যেন প্ল্যাটিলেট কমে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন কারণে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।নিচে প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.প্লাটিলেট অস্থিমজ্জায় উৎপন্ন হয়। যদি অস্থিমজ্জায় কোন ধরনের ইনফেকশন দেখা দেয়। তাহলে প্লাটিলেট কম পরিমাণে উৎপন্ন হয়। যার ফলে শরীরে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
২.ডেঙ্গু জ্বর, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, কোভিড-১৯ ইত্যাদি ভাইরাস সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
৩.কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগের কারণেও শরীরে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
৪.ব্লাড ক্যান্সার এর কারণে শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
৫.ক্যান্সারের কেমোথেরাপি বা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে প্লাটিলের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
৬.অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে লিভারে ইনফেকশন বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে শরীরে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
৭.গর্ভাবস্থায় কিছু জটিল সমস্যা দেখা দেয়। যে সমস্যাগুলোর কারণে অনেক সময় প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
৮.শরীরে কোথাও অতিরিক্ত ও রক্তক্ষরণ হলে যদি দ্রুত সেটি বন্ধ করা না যায়। তাহলেও শরীরে প্লাটিলের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
উপরোক্ত কারণগুলো যদি প্রতিরোধ করা যায়। তাহলে শরীরে প্লাটিলেট কমে যাওয়া প্রতিরোধ করা যাবে এবং প্লাটিলেট শরীরে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকতে পারে।
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ
পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পায়। যে লক্ষণ গুলো দেখলে বোঝা যায় যে শরীরে প্লাটিলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.প্লাটিলেট কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল শরীরের যে কোন কাটাস্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে দেরি হওয়া।
২.ডেঙ্গু জ্বর প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
৩.শরীরের বিভিন্ন জায়গা যেমন নাক বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া ।
৪.পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
৫.শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুটি গুটি র্যাশ দেখা দেওয়া।
৬.শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
৭.শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বল অনুভূত হওয়া।
৮.নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধির উপায়
রক্তে প্লাটিলের পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত প্ল্যাটিলেট কমে গেলে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়। যার ফলে মৃত্যু হতে পারে। তাই নিচে কিছু খাবারের নাম দেওয়া হলো যে খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে প্লাটিলের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
১.পেঁপে পাতার রস শরীরে প্লাটিলেট উৎপাদন করতে সাহায্য করে তাই শরীরে পরিমাণ কমে গেলে পেঁপে পাতা আর রস খাওয়া যেতে পারে।
২.দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। যা অস্থিমজ্জা থেকে প্লাটিলেট উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। এতে শরীরে প্লাটিলের পরিমাণ বাড়তে পারে।
৩. পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন বি১২ জাতীয় খাবার যেমন- বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৪.বিভিন্ন ধরনের টাটকা শাকসবজি শরীরে প্লাটিতে পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্লাটিলের পরিমাণ কমে গেলে বৃত্তির জন্য শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে।
৫.কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে প্লাটিলেট পরিমাণ কমে যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
৬.রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কুমড়ো বা কুমড়োর বীজ খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্তে প্লাটিলেট উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।
৭.অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলো শরীরের প্লাটিলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
৮.ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি রক্তে প্লাতিলেটের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
প্লাটিলেট বেশি হলে কি হয়
রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বেড়ে যায় খুব কম। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়। যেমন শিরা বা ধমনীর মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় অতিরিক্ত রক্ত জমাট বাধার কারণে ব্রেনের বিভিন্ন শির বা ধমনীর নষ্ট হয়ে যায়।যার ফলে প্যারালাইসিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় কিছু জটিলতার কারণে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যেতে পারে। প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরে প্লাটিলেট বাড়ানোর জন্য রক্ত দিতে হবে।
সুস্থ মানুষের প্লাটিলেট কত থাকে
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ ১৫০ লাখ থেকে ৪৫০ লাখ থাকে। যদি প্লাটিলেটের পরিমাণ ১৫০ লাখের কম হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আবার যদি প্লাটিলেট পরিমাণ ৯ লাখের বেশি হয় তাহলে শরীরে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে যা পরবর্তীতে প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্লাটিলেট কত হলে রক্ত দিতে হয়
রক্তে প্লাটিলের পরিমাণ ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে রক্ত দিতে হয়। এছাড়াও যদি প্লাটিলেটের পরিমাণ ২০ বা ৩০ হাজার থাকে তাহলেও রক্ত দেওয়া উত্তম।
রক্তের প্লাটিলেট কত হলে মানুষ মারা যায়
রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ যদি ১০ হাজারের নিচে নেমে যায় এবং সেই সময় যদি শরীরের কোথাও থেকে রক্তক্ষরণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। তাহলে রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে মানুষ মারা যায় না।
কি খেলে রক্ত প্লাটিলেট বাড়ে
কিছু খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। যে খাবারগুলো শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে এবং সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে এবং অস্থিমজ্জাকে সুস্থ রাখবে। যার ফলে অস্থিমজ্জা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেট উৎপন্ন করতে পারবে।
১.ভিটামিন সি যুক্ত খাবার।
২.ভিটামিন বি১২ যুক্ত খাবার।
৩.দুধ।
৪.পেঁপে পাতার রস।
৫.বিভিন্ন ধরনের টাটকা শাকসবজি।
৬.কুমড়ো বা কুমড়োর বীজ।
৭.তরল জাতীয় খাবার যেমন- বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস, ডাবের পানি।
৮.ব্রকলি।
প্লাটিলেট দিতে কত সময় লাগে
রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ অতিরিক্ত কমে গেলে চিকিৎসক রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ সময় চিকিৎসক সম্পূর্ণ রক্ত থেকে আফারেসিস মেশিনের দ্বারা রক্ত থেকে প্লাটিলেট আলাদা করে তারপরে শরীরে দেওয়া হয়। এই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ১ ঘন্টা থেকে ১:৩০ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
সর্বোপরি রক্তে প্লাটিলেটের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এই প্লাটিনাটি আমাদের শরীরে রক্তক্ষরণ হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এই প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে অনেক সময় মৃত্যু হতে পারে তাই আমাদের সবসময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্লাটিলেটের পরিমাণ যাতে স্বাভাবিক থাকে সেই অনুযায়ী চলতে হবে।
Post a Comment
0Comments