মেয়েদের হরমোন টেস্ট কিভাবে করে
মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের হরমোন রয়েছে। অনেক সময় শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। কিন্তু অনেকেই হরমোন সম্বন্ধে না জানার কারণে বুঝতে পারে না। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন হরমোন কি, হরমোন কত প্রকার ও কি কি, হরমোন টেস্টের নাম, হরমোন টেস্ট কেন করা হয়, হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়, হরমোন কম হলে কি হয়, হরমোন সমস্যার লক্ষণ, হরমোন এর কাজ কি, মেয়েদের হরমোন টেস্ট কিভাবে করে, হরমোন টেস্ট করতে কত সময় লাগে এবং হরমোন টেস্ট খরচ কত সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব মেয়েদের হরমোন টেস্ট কিভাবে করে
হরমোন কি
হরমোন হলো শরীরে উৎপাদিত হওয়া জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক বা শরীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে এবং কাজ শেষে ধ্বংস হয়ে যায়। হরমোনকে শরীরের প্রাণ রস বলা হয়।হরমোন শরীরের বিভিন্ন কোষ বা গ্লান্ড থেকে উৎপন্ন হয়।
হরমোন কত প্রকার ও কি কি
মানবদেহে প্রায় ৫০ টিরও বেশি হরমোন আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী হরমোন তিন ভাগে বিভক্ত।
১. Peptide Hormone (পেপটাইড হরমোন)
২.Steroid Derived Hormone (স্টেরয়েড-জাত হরমোন)
৩.Amino Acid Derived Hormone) (এমাইনো এসিড -জাত হরমোন)
হরমোন টেস্টের নাম
- Thyroid Stimulating Hormone(TSH) -থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন
- Adrenocorticotrophic hormone(ACTH) - অ্যাড্রেনো কর্টিকো ট্রফিক হরমোন
- Somatotrophic hormone(STH) - সোমাটোট্রফিক হরমোন
- Gonadotrophic Hormone(GTH) - গোনাডোট্রফিক হরমোন
- Follicle Stimulating Hormone(FSH) - ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন
- Luteinizing Hormone(LH) - লিউটিনাইজিং হরমোন
- Interstitial Cell Stimulating Hormone(ICSH) -ইন্টারস্টিসিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন
- Antidiuretic hormone(ADH) -অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোন
- Thyrotrophin Releasing Hormone(TRH)- থাইরোট্রফিন রিলিজিং হরমোন
- Adrenocorticotropic Releasing Hormone(ARH)-অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক রিলিজিং হরমোন
- Somatotrophin Releasing Hormone(SRH) - সোমাটোট্রফিন রিলিজং হরমোন
- Growth Hormone(GH) - গ্রোথ হরমোন
- Gonadotrophin Releasing Hormone(GnRH) -গোনাডোট্রফিন রিলিজিং হরমোন
- Prolactin Releasing Hormone(PRH) - প্রোল্যাকটিন রিলিজিং হরমোন
- Prolactin Inhibiting Hormone(PIH)- প্রোল্যাকটিন ইনহিবিটিং হরমোন
- Melanocyte Releasing Hormone(MRH )- মেলানোসাইট রিলিজিং হরমোন
- Melanocyte Inhibiting Hormone(MIH) - মেলানোসাইট ইনহিবিটিং হরমোন
- Melanocyte Stimulating Hormone(MSH) – মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন
- Anti Mullerian Hormone (AMH)-অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন
- Testosterone-টেস্টোস্টেরন
- FT4
- FT3
- T4
- T3
- Insulin Hormone(IH)-ইনসুলিন হরমোন
হরমোন টেস্ট কেন করা হয়
শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন রয়েছে। এই হরমোন গুলোর ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে হরমোন টেস্ট করা হয়।
১.গাইনোকোলজিক্যাল বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয় করার জন্য হরমোন টেস্ট করা হয়।
২.হরমোন উৎপাদনকারী কোষ বা গ্লান্ডে টিউমার বা ইনফেকশন দেখা দিলে হরমোন টেস্ট করার প্রয়োজন হয়।
৩.শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে হরমোন টেস্ট করা হয়।
হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়
যেহেতু মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের হরমোন দ্বারা গঠিত। এক একটি হরমোন এক এক ধরনের কাজ করে। তাই নিতে কিছু হরমোনের নাম দেয়া হলো যেগুলো বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
১.থাইরয়েড গ্রন্থ থেকে উৎপাদিত হরমোন থাইরয়েড হরমোন। যা বেড়ে গেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২.টেস্টোস্টেরন হরমোনের মেয়েদের শরীরে বেড়ে গেলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয় সাথে সাথে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। পুরুষের শরীরে পরিমাণ বেড়ে গেলে শারীরিক চাহিদা কমে যায় বা শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায় ।
৩.মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় এন্ড্রোজেন বা ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে পিসিওডি বা পিসিএস এর সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
৪.মেয়েদের শরীরে প্রোল্যাকটিনের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫.পুরুষ ও মহিলা উবার শরীরে করটিসল হরমোন বেড়ে গেলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে বা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হরমোন কম হলে কি হয়
শরীরে বিভিন্ন ধরনের হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। নিচে হরমোনের ঘাটতি জনিত সমস্যার কারণে কি কি সমস্যা হতে পারে তা দেওয়া হলঃ
১.থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড হরমোন যা শরীরে কমে গেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২.গ্রোথ হরমোন শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় কমে গেলে শরীরের গ্রোথ কমে যায়।
৩.মেলানিন নামের একটি হরমোন ত্বক ফর্সা করার জন্য দায়ী। যদি এই হরমোন কমে যায় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের কালো কালো র্যাশ বা ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।
৪.পলিটিন হরমোন মায়েদের বুকে দুধ উৎপাদন করতে সাহায্য করে। তাই প্র্যাকটিন হরমোন কমে গেলে যেমন বুকে দুধ কম তৈরি হবে এবং সাথে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়।
৫.ইনসুলিন হরমোন শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যদি ইনসুলিন হরমোনের পরিমাণ কমে যায় তাহলে শরীরে ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়।
৬.টেস্টোস্টেরন হরমোন বা ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে শারীরিক চাহিদা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যদি কমে যায়।এছাড়াও এই হরমোনের ঘাটতির কারণে কারণে শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়।
৭.অ্যাড্রোনানিল হরমোন শিশুদের মধ্যে কমে গেলে বয়সন্ধিঃকালে শারীরিক গঠনে সমস্যা দেখা দেয়।
হরমোন সমস্যার লক্ষণ
শরীরে হরমোনের সমস্যা দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলোঃ
১.শারীরিক বৃদ্ধি বা গঠন ব্যাহত হওয়া।
২.অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়।
৩.বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দেওয়া।
৪.মেয়েদের ক্ষেত্রে শরীরে অবাঞ্ছিত লোম বা ব্রণ দেখা দেওয়া।
৫.শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দেওয়া।
৬.মেয়েদের ক্ষেত্রে পিসিওডি বা পিসিওএস সমস্যা দেখা দেওয়া ।
৭.ছেলেদের ক্ষেত্রে বীর্যের পরিমাণ কমে যাওয়া।
৮.ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যাওয়া।
৯.শারীরিক চাহিদা কমে যাওয়া।
১০.ত্বক কালো হয়ে যাওয়া।
১১.ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
১২.হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
১৩.মাংসপেশী বা হাড়ে দুর্বল অনুভূত হওয়া।
১৪.শরীরের বিভিন্ন জায়গা যেমন- হাত, পা ও মুখ ফুলে যাওয়া।
১৫.গলার স্বরের পরিবর্তন হওয়া।
হরমোন এর কাজ কি
বিভিন্ন ধরনের হরমোনের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
১.সন্তান ধারণ করতে হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২.শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধি ঘটাতে হরমোন কাজ করে।
৩.শরীরের বিভিন্ন হাড় বা মাংসপেশি মজবুত করতে হরমোন কাজ করে।
৪.শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হরমোন কাজ করে।
৫.শরীরের ক্লান্তি দূর বা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আনতে বিভিন্ন ধরনের হরমোন কাজ করে ।
৬.শরীরের ত্বক সুরক্ষা রাখতে হরমোন কাজ করে।
মেয়েদের হরমোন টেস্ট কিভাবে করে
যেকোনো সময় হরমোন টেস্ট করা যায়। হরমোন টেস্ট করার জন্য প্রথমে রোগীর কাছ থেকে ব্লাড রেড টিউবে নেওয়া হয়। তারপরে রেড টিউব সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে দিয়ে ঘুরিয়ে সিরাম তৈরি করা হয়। সেই সিরাম দিয়ে টেস্ট করা হয়। হরমোন টেস্ট দুই পদ্ধতিতে করা যায়।
১.ELISA Method-এই মেথডে হরমোন টেস্ট করতে ২ থেকে তিন ৩ সময় লাগে।
২.Quick Method-এই মেথডে টেস্ট হরমোন টেস্ট করতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
হরমোন টেস্ট করতে কত সময় লাগে
হরমোন টেস্ট করতে এলাইজা মেথডে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা এবং কুইক মেথডে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে এবং পুরো রিপোর্টটি হাতে পেতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগবে পারে ।
হরমোন টেস্ট খরচ কত
শরীরে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের হরমোন থাকে। তাই নিচে কিছু হরমোন টেস্টের নাম ও টেস্টের খরচ কত দেওয়া হলঃ
Sl.No. | Test Name | Price List |
---|---|---|
1. | TSH | 900 |
2. |
T3 | 1300 |
3. | T4 | 1300 |
4. | FT4 | 1300 |
5. | FT3 | 1300 |
6. | Prolactin | 1300 |
7. | AMH(Anti Mullerian Hormone) |
4500 |
8. | Testosterone | 1300 |
9. | FSH | 1300 |
10. | LH | 1300 |
11. | Estrogen | 1500 |
12. | Progesterone | 1300 |
13. | Growth Hormone(GH) | 1300 |
সর্বোপরি হরমোন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই হরমোন আমাদের শরীরের সব ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের সবসময় হরমোনের সঠিক ব্যালেন্স শরীরে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
Post a Comment
0Comments