কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়
বর্তমানে প্রায় প্রতিটা ঘরেই কুকুর পোষা হয়।কিন্তু অনেক সময় এই পোষা কুকুরকে রাবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না। ফলে এদের মধ্যে রাবিস ভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। পরবর্তীতে এই কুকুর যদি মানুষকে কামড় দেয়। তাহলে তার জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কুকুর কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা, কুকুর কামড়ালে কি রোগ হয়, কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়, কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলতাঙ্ক হয়, রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম, কুকুর কামড়ালে কি কি খাওয়া যাবে,কুকুর কামড়ালে কি কি খাওয়া যাবে না,কুকুর কামড়ালে কি বাচ্চা হয়, কুকুর কামড়ালে কি দোয়া পড়তে হয় এবং কুকুর কামড়ালে করণীয় সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেল আলোচনা করব কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়
কুকুর কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা
অনেক সময় বাড়িতে পোষ মানা কুকুর বা বাইরের যে কোন কুকুর কামড় দিতে পারে। এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে এর প্রাথমিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন। পরবর্তীতে টিকা না প্রয়োজন। কিন্তু আমরা অনেক সময় আমরা এই কুকুরের কামড় কে সাধারণ ভাবে নেই এবং এর সঠিক চিকিৎসা নেইনা। পরবর্তীতে এটি শরীরের জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই কুকুরের কুকুর কামড় দিলে সাথে সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে এবং সাথে সাথে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১.কুকুরে কামড় দিলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে প্রথমেই প্রাথমিক চিকিৎসা হলো রক্তপাত বন্ধ করার জন্য হাত দিয়ে বা কোন পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরা।
২.রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পরে ক্ষতস্থানটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট অ্যান্টিসেপটিক কোনো সাবান এবং পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা।
৩.তারপর ক্ষতস্থানটি একটি অ্যান্টিসেটিক ক্রিম বা মলম দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে।
৪.তারপর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৫.কুকুর কামড়ানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
কুকুর কামড়ালে কি রোগ হয়
কুকুরে কামড় দিলে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয় । তবে যদি যে কুকুর কামড় দেয় সেই কুকুরের মধ্যে জলতাঙ্ক রোগের লক্ষণ বা রাবিস ভাইরাসের জীবাণু ভিতরে থাকে। তাহলে কামড়ের মাধ্যমে জলতাঙ্ক রোগ ছড়িয়ে থাকে।কুকুর কামড় দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা নিলে জলাতঙ্ক রোড প্রতিরোধ করা যায়।আর যদি কুকুরের কামড়ের পরে টিকা দেওয়া না হয়। তাহলে এই জলাতঙ্ক রাবিস ভাইরাস ১০ দিন থেকে ৬ মাস এর মধ্যে ব্রেনের স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে তীব্র মাথা যন্ত্রণা বা শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে ১০০% এর মধ্যে ১০০% ই মৃত্যু ঘটে।
কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
কুকুর কামড় দিলে আমরা অনেক সময় টিকা নেয় না। এতে পরবর্তীতে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কুকুর কামড় দিলে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। কুকুর কামড় দেওয়ার ২৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিকা নেওয়া উচিত। কারণ এই সময়ের মধ্যে টিকা নিলে কুকুরের কামড়ের ফলে যদি রাবিস ভাইরাসের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। তাহলে এই টিকা রাবিস ভাইরাসের জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয় বা শরীরে ছড়িয়ে পড়া থেকে প্রতিরোধ করে।
কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলতাঙ্ক হয়
সাধারণত সব কুকুরের কামড়ের ফলে শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয় না। শুধুমাত্র যে কুকুরের শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ আছে বা শরীরে রাবিস ভাইরাসের জীবাণু আছে। সেই কুকুরের কামড়ের ফলে শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।কুকুর কামড়ালে শরীরে ১০ দিন থেকে ৬ মাস বা ১ বছর পরেও জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে বা জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। কারণ রাবিস ভাইরাসের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর প্রথমে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে যায় এবং পরবর্তীতে এটি সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ার জন্য কিছুটা সময় নেয়। আর এই সময় কারো ক্ষেত্রে ৬ মাস বা ১ বছরও হতে পারে।
রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম
কুকুর কামড়ালে কামড়ানোর ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে টিকা দেওয়া উচিত। রাবিস ভ্যাকসিন বা টিকা ২ পদ্ধতিতে দেওয়া যায়। একটি হলো চামড়ার নিচে দেওয়া এবং অপরটি হল মাংসপেশীতে দেওয়া। তবে বর্তমানে কুকুরে কামড়ালে মাংসপেশীতে টিকা বেশি দেওয়া হয়।
যেহেতু বর্তমানে রাবিস ভ্যাকসিন মাংসপেশীতে বেশি দেওয়া হয়। মাংসপেশীতে রাবিস ভ্যাকসিন ৩ দিন বা ৫ দিনের ডোজের টিকা দেওয়া হয় বা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।তাই নিচে মাংসপেশীতে টিকা দেওয়ার নিয়ম দেওয়া হলঃ
১.৩ দিনের ডোজঃ
- প্রথম ডোজটি হলো কুকুর কামড়ানোর ০তম দিনে।
- দ্বিতীয় ডোজটি হলো প্রথম টিকা দেওয়ার ৩য় দিনে ।
- তৃতীয় ডোজটি হলো প্রথম টিকা দেওয়ার ৭ম দিনে।
প্রথম ডোজে ২ হাতের ২ বাহুতে ২ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজে ১ টিকা করে দেওয়া হয়।
২. ৫ দিনের ডোজঃ
- প্রথম ডোজটি হলো কুকুর কামড়ানোর ০তম দিনে।
- দ্বিতীয় ডোজটি প্রথম ডোজ দেওয়ার ৩য় দিনে।
- তৃতীয় ডোজটি হলো প্রথম ডোজ দেওয়ার ৭ম দিনে।
- চতুর্থ ডোজটি হলো প্রথম দেওয়ার ১৪ তম দিনে ।
- পঞ্চম ডোজটি হলো ২৮ তম দিনে।
৩.যদি মনে হয় যে কুকুরে কামড় দিতে সেই কুকুরের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ আছে বা রাবিস ভাইরাসের জীবাণু আছে। তাহলে অবশ্যই রাবিস ভ্যাকসিনের টিকার সাথে ইমিউনোগ্লোবিন টিকা দিতে হবে।
৪.কুকুর কামড়ানোর পরে টিকা দেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে যদি আবার কুকুর কামড় দেয়। তাহলে পুনরায় টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নাই।
৫.টিকা নেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে যদি কুকুর আবার কামড় দেয় । তাহলে কুকুর কামড়ানোর শূন্যতম দিনে ও তৃতীয় বুস্টার টিকা নিলেই হয় ।
৬.এছাড়াও যে কুকুর কামড় দেয় সেই কুকুর ১০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে। তাহলে ১৪তম ও ২৮ তম দিনে টিকা না নিলেও হয়।
কুকুর কামড়ালে কি কি খাওয়া যাবে
কুকুর কামড়ালে সব ধরনের খাবারে কমবেশি খাওয়া যাবে। তবে এ সময় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশি বেশি করে ভিটামিন এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
কুকুর কামড়ালে কি কি খাওয়া যাবে না
কুকুর কামড়ালে সব ধরনের খাবারে কম বেশি খাওয়া যাবে। তবে কুকুর কামড়ানোর ফলে যেহেতু শরীরে রাবিস ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ সময় ভিতরে অতিরিক্ত কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ না ঘটে তার জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও কুকুর কামড়ানোর ক্ষতস্থান দ্রুত শুকানোর জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। নিচে কিছু খাবারের নাম দেওয়া হল যেগুলো কুকুর কামড়ালে না খাওয়াই উচিত।
১.কুকুরে কামড়ালে মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত মিষ্টির জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ব্যাকটেরিয়া জামাতে পারে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
২.কুকুর কামড়ালে খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ দুগ্ধ জাতীয় খাবার ক্ষতস্থান সারাতে বাধা সৃষ্টি করে।
৩.কুকুর কামড়ালে কম সেদ্ধ করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কম সেদ্ধ করা খাবারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা শরীরে সংক্রামক ঘটাতে পারে।
৪.কুকুরে কামড়ালে অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
৫.কুকুর কামড়ালে মদ্যপান বা অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে ক্ষতস্থান শুকাতে দেরি হয়।
৬.খুকু কামড়ালে প্রক্রিয়াজাত সব ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসব খাবার বাড়াতে সাহায্য করে।
কুকুর কামড়ালে কি বাচ্চা হয়
অনেকের মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে যে কুকুর কামড়ালে কি বাচ্চা হয়। তবে এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণাঅ কারণ বাচ্চা হওয়ার জন্য পুরুষ ও মহিলার ডিম্বানু ও শুক্রানুর প্রয়োজন হয়। তাই কুকুর কামড়ালে বাচ্চা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
কুকুর কামড়ালে কি দোয়া পড়তে হয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ধরনের বিষাক্ত প্রাণীর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে দোয়া কুকুর কামড়ালেও পার করা যেতে পারে।
সহীহ তিরমিজি ৩৬০৪ নং হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল বলেন, ’যে ব্যক্তি সকাল- সন্ধ্যা নিম্নক্ত দোয়াটি তিনবার পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সমস্ত প্রাণী, বিশেষ করে সাপ, বিচ্ছু প্রভৃতি বিষাক্ত ও কষ্টদায়ক প্রাণীর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।
দোয়াটি হলঃ
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণঃ ’আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক।’
অর্থঃ ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’
কুকুর কামড়ালে করণীয়
অনেক সময় পুকুরে কামড়ালে ভয় পেয়ে যায় । তাই কুকুরে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
১.বাড়িতে পোষা কুকুরকে সময় মত ভ্যাকসিন দিতে হবে।
২.কুকুরে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানটি এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে ভালোভাবে ওয়াশ করতে হবে এবং কোন এন্টিব্যাকটেরিয়াল মলমবা কিরিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে।
৩.দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৪.পুকুরে কামড়ানোর ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে টিকা দিতে হবে।
৫.এসো মা এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
সর্বোপরি কুকুরে কামড়ানোর ফলে শরীরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আর এই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ যদি একবার শরীরে দেখা দেয় তাহলে মৃত্যু ঘটবেই। তাই আমাদের সবসময় কুকুর কামড় থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং কামড় দিলেও সাথে সাথে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
Post a Comment
0Comments