জরায়ু মুখ না খোলার কারণ
গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারির জন্য জরায়ুর মুখ খোলাটা খুবই জরুরী। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন কারণে এই জরায়ুর মুখ খোলে না। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন জরায়ুর মুখ না খোলার কারণ, জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ, জরায়ুর মুখ খোলার উপায়,গর্ভফুল নিচে থাকলে কি করতে হবে,জরায়ুর মুখ খুলতে কত সময় লাগে,জরায়ুর মুখ ছোট হলে করনীয়,জরায়ুর নরমাল সাইজ কত,জরায়ুর মুখ খোলার হোমিও ঔষধ, জরায়ু নিচে নেমে গেলে কি বাচ্চা হয় না এবং জরায়ু বড় হওয়ার কারন কি সর্ম্পকে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব জরায়ু মুখ না খোলার কারণ
জরায়ু মুখ না খোলার কারণ
গর্ভাবস্থায় ডেলিভারির সময় জরার মুখ না খোলার কারণে অনেক সময় নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয় না। বিভিন্ন কারণে জরায়ুর মুখ খোলে না। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলঃ
১.জরায়ুর মুখ দুর্বল হলে গর্ভাবস্থায় ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ হলে না।
২.জরায়ুর মুখ স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হলে ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
৩.জরায়ুর মুখে ক্ষত বা ব্যথা থাকলে কোন সংকোচন ছাড়াই জরায়ু প্রসারিত হয়। যার কারণে ডেলিভারি সময় জরায়ুর মুখ খোলার সম্ভাবনা কম থাকে।
৪.জরায়ু অপারেশন বা জরায়ু টিউমার অপারেশন ফলে ডেলিভারির সময় জরায়ুর মুখ খোলা সম্ভাবনা কম থাকে।
জরায়ুর মুখ খোলার লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারির আগে জরায়ুর মুখ খুলে গেলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ
১.জরায়ুর মুখ ঘন ঘন সংকুচিত বা প্রসারিত হওয়া।
২.মিউকাস প্লাগ বা অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া।
৩.সাদা স্রাবের সাথে রক্ত বা ময়লা যাওয়া।
৪.গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হল পানি ভেঙ্গে যাওয়া।
৫.বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাওয়া।
৬.পেটে, পিঠে বা কোমরে ব্যথা ব্যাথা অনুভূত হওয়া।
৭.ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আশা বা প্রস্রাব হওয়া।
জরায়ুর মুখ খোলার উপায়
গর্ভাবস্থায় শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে এবং বাচ্চা সঠিক ওজন এবং সুস্থ বা সঠিক পজিশনে থাকলে নরমাল ডেলিভারি হতে পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে ডেলিভারির সময় খুব সহজেই জরায়ুর মুখ খুলতে পারে এবং নরমাল ডেলিভারি হতে পারে।
১.গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকতে হবে।
২.চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
৩.প্রতিদিন খাবার তালিকা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শাকসবজি বা ফলমূল রাখতে হবে।
৪.প্রতিদিন অন্তত আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হালকা শারীরিক চর্চা করতে হবে।
৫.প্রতি তিন মাস অন্তর রুটিন চেকআপ করতে হবে এবং আলট্রাসিনো করে দেখতে হবে বাচ্চা সঠিক পজিশনে আছে কি না।
৬.মানসিক টেনশন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭.মনে নরমাল ডেলিভারি করার প্রস্তুতি বা আসা রাখতে হবে।
গর্ভফুল নিচে থাকলে কি করতে হবে
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক অবস্থা হল বাচ্চা নিচের দিকে থাকবে এবং প্লাসেন্টা উপরের দিকে থাকবে। তবে অনেক সময় এই প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল নিচের দিকে নেমে আসে একে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলা হয়।গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল নিচের দিকে নেমে গেলে চিকিৎসক প্লাসেন্টা ম্যাচুরেশনের জন্য এলিজেস্ট্রেনল ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ওষুধ মূলত গর্ভাবস্থায় ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া উত্তম। তবে অনেক সময় গর্ভকালীন যে কোন সময় দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
জরায়ুর মুখ খুলতে কত সময় লাগে
গর্ভাবস্থায় পূর্ণ গর্বকাল পূর্ণ হয়ে গেলে এবং বাচ্চা সঠিক পজিশনে বা নরমাল পজিশনে থাকলে জরায়ুর মুখ খুলতে ৬ থেকে ১০ ঘন্টা বা ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা সময় লাগবে পারে।
জরায়ুর মুখ ছোট হলে করনীয়
অধিকাংশ নারীর জরায়ু মুখ স্বাভাবিক থাকে। তবে কিছু কিছু নারীদের জরায়ু মুখ ছোট থাকে। এর জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো উত্তম এবং তার চিকিৎসা অনুযায়ী চললে জরায়ু মুখ স্বাভাবিক হতে পারে।
জরায়ুর নরমাল সাইজ কত
নারীদের জরায়ু দেখতে অনেকটা নাশপাতি ফলের মত। এখন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর জরায়ুর ওজন থাকে ৬০ গ্রাম। একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর জরায়ুর নরমাল সাইজ নিচে দেওয়া হলঃ
- লম্বাঃ 7.6 সেমি বা 3.0 ইঞ্চি
- প্রশস্তঃ 4.5 সেমি বা 1.8 ইঞ্চি
- পুরুঃ 3.0 সেমি বা 1.2 ইঞ্চি
জরায়ুর মুখ খোলার হোমিও ঔষধ
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলে নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এ সময় চিকিৎসক বিভিন্ন ধরনের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিয়ে থাকেন। তার মধ্যে কিছু ওষুধের নাম নিচে দেওয়া হলঃ
- Chamomilla(ক্যামোমিলা)
- Actea racemosa / Cimicifuga(অ্যাক্টিয়া রেসমোসা / সিমিসিফুগা)
- Pulsatilla pratensis (পালসেটিলা প্রাটেনসিস)
- Gelsemium sempervirens(জেলসেমিয়াম সেম্পারভাইরেন্স)
- Belladonna(বেলাডোনা)
জরায়ু নিচে নেমে গেলে কি বাচ্চা হয় না
জরায়ু নিচে নেমে গেলে কি বাচ্চা হয় না এটা প্রায় অনেকের মনে একটি কমন প্রশ্ন। তবে জরায়ু নিচে নেমে গেলেও বাচ্চা হয়। তবে জরায়ু নিচে নামার লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জরায়ু বড় হওয়ার কারন কি
বিভিন্ন কারণে জরায়ু বড় হতে পারে। নিচে কারণগুলো দেওয়া হলঃ
১.জরায়ুতে টিউমার বা সিস্ট দেখা দিলে জরায়ু বড় হতে পারে।
২.অনেক সময় গর্ভধারণের কারণে জরায়ু বড় হতে পারে।
৩. জরায়ুতে ক্যান্সার দেখা দিলে জরায়ু বড় হতে পারে।
৪.জরায়ুতে পিসিওডি বা পিসিএস এর সমস্যা দেখা দিলে জরায়ু বড় হতে পারে।
৫.ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর ভিতরের অংশ বা জরায়ুর বাইরের অংশ বড় হয়ে গেলে জরায়ু বড় হতে পারে।
কি খেলে জরায়ু ভালো থাকে
জরায়ু নারীদের শরীরের একটু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কারণ এই জরায়ুর মাধ্যমে নারীরা মা হতে সক্ষম হয়। তাই জরায়ু ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন খাবার তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখা উচিত যা খেলে জরায়ু ভালো থাকে।
১. জরায়ু ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
২.জরায়ু ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
৩.জরায়ু ভালো রাখতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
৪.জরায়ু ভালো রাখতে বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৫.জরায়ু ভালো রাখতে শস্যদানা জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৬.জরায়ু ভালো রাখতে দারুচিনি খাওয়া যেতে পারে।
সর্বোপরি মা হওয়ার জন্য আমাদের জরায়ু ভালো থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এবং গর্ভাবস্থায় নরমাল ডেলিভারির জন্য যেন সঠিক সময়ে জরায়ু মুখ খোলে তার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
Post a Comment
0Comments