কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ

Pathology Knowledge
By -
0

কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ


বর্তমানে ছোট থেকে বড় প্রায় সবারই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন বা খাবার খাবার মাধ্যমে রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন সিরাম কোলেস্টেরল কি,কোলেস্টেরল কেন হয়,কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয়,কোলেস্টেরল লক্ষণ,কোলেস্টেরল কমানোর ঘরোয়া উপায়,কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা,কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা,দুধে কি কোলেস্টেরল আছে,কোলেস্টেরল হলে কি কি খাওয়া নিষেধ,কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ,কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ এবং কোলেস্টেরল পরীক্ষা খরচ কত সম্পর্কে।


কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ


আমরা আজ আর্টিকেল আলোচনা করব  কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ



সিরাম কোলেস্টেরল কি


সিরাম কোলেস্টেরল টেস্ট হলো লিপিড প্রোফাইল টেস্ট পানেলের এর একটি টেস্ট। যার মাধ্যমে শরীরের ধমনীতে বা রক্তনালিতে জমা চর্বির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। ধর্মনিতে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুকি বেড়ে যায়।


কোলেস্টেরল কেন হয়


আমাদের শরীরে মোট চার ধরনের চর্বি চর্বি থাকে। এর ভিতর এক ধরনের চর্বি আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। বাকি তিন ধরনের চর্বি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কোলেস্টেরল তার মধ্যে একটি। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন কারণে শরীরে কোলেস্টেরল  পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। 


১.কোলেস্টেরল বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো খাদ্য অভ্যাস। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।


২.কায়িক পরিশ্রম না করার কারণে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।


৩.খাবার খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে বা বসে থাকলে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।


৪.অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।


৫.অতিরিক্ত ধূমপান বা মাদকদ্রব্য বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।


৬.অতিরিক্ত ফাস্টফুড বা সফট ড্রিংকস জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।


কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয়


রক্তে চর্বি পরিমাণ বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।




১.রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।


২.রক্তনালীতে চর্বি পরিমাণ বেড়ে গেলে বা কোলেস্ট্রলের পরিমাণ বেড়ে গেলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। যার কারণে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।


৩.শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে খাবার হজম হতে সমস্যা সৃষ্টি করে যার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে।


৪.শরীরে দুর্বলতা বা ক্লান্তি বোধ অনুভূত হতে পারে।


৫.শরীরে অলসতা দেখা দিতে পারে।


৬.ক্ষুধা কমে যেতে পারে।


৭.অতিরিক্ত কলেজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটি উচ্চ রক্তচাপ বা ধমনীর বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দেখা দিতে পারে।


কোলেস্টেরল লক্ষণ


শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেটা দেখে বোঝা যায় যে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেছে। নিচে লক্ষণগুলো দেওয়া হলঃ


১.অতিরিক্ত হার্টবিট বাড়ি হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।


২.বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া।


৩.বুক ধরফর করা।


৪.শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া।


৫.শরীরে অলসতা কাজ করা।


৬.শরীর দুর্বল বা ক্লান্তি বোধ হওয়া।


৭.ক্ষুধা কমে যাওয়া।


৮.ত্বকের রং বদল হওয়া।


৯.পেটে ব্যাথা হওয়া।


১০.মাথা বা ঘাড়ে ব্যথা হওয়া।


১১.অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা পেতে অতিরিক্ত চর্বি জমা।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। 


কোলেস্টেরল কমানোর ঘরোয়া উপায়


শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে পরিমাণ কমানো যেতে পারে।


১.অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


২.নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক চর্চা করতে হবে ।


৩.প্রতিদিন সকালে ওটস খাওয়া যেতে পারে। এটি  শরীরে কোলেস্টেরলের  পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।


৪.পরিমাণ কমাতে গ্রিন টি খুব উপকারী। সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে কোলে পরিমাণ কমে যেতে পারে।


৫.প্রতিদিন খাবার তালিকায় বাদাম রাখা যেতে পারে। এতে চইলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যেতে পারে।


৬.প্রতিদিন খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল রাখতে হবে।


৭.প্রতিদিন খালি পেটে এক কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।


কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা


প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কয়েকটি খাবার রাখলে সহজে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বা উচ্চ কোলেস্টেরল কমানো যেতে পারে। 




১.ওটস বা বার্লি

২.গ্রিন টি

৩.বিভিন্ন ধরনের বাদাম।

৪.বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি যেমন- কচু শাক, পালং শাক, পুঁইশাক ইত্যাদি।।

৫.মেথি

৬.রসুন 

৭.অলিভ অয়েল

৮.বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন- এভোকাডো, আপেল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা। কমলা ইত্যাদি।

৯.দুধ 


দুধে কি কোলেস্টেরল আছে


অনেকেই মনে করেন দুধ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই কোলেস্টেরল বাড়ার ভয়ে দুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। তবে ”ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ওবেসিট “ গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়ায় না বরং শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।এছাড়াও দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যার শরীরে হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত খাবার তালিকায় দুধ রাখলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।


কোলেস্টেরল হলে কি কি খাওয়া নিষেধ


শরীরে কোলেস্টেরল পরিমাণ বেড়ে গেলে কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসব খাবার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।




১.অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


২.অতিরিক্ত ফাস্টফুড বা সফট ড্রিংকস জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


৩.অতিরিক্ত ঘি, মাখন, বাটার বা ডালটা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


৪.প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


৫.অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন- কেক, আইসক্রিম, ডার্ক চকলেট, মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।


কোলেস্টেরল নরমাল রেঞ্জ


কোলেস্টেরল লিপিড প্রোফাইল প্যানেলের একটি টেস্ট। নিচে  লিপিড প্রোফাইল টেস্ট এর নরমাল রেঞ্জ দেওয়া হলঃ



Sl.No.
Test Name Norman Range
1. Serum Cholesterol <200 mg/dl
2.
Serum Triglycerides <150 mg/dl
3. Serum HDL(High Density Lipoprotein) 35-65  mg/dl
4. Serum LDL(LowDensity Lipoprotein) <150 mh/dl


কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ


শরীরে কোলেস্ট্রলের পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রাথমিক পর্যায়ে খাবার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করা উত্তম। এতে যদি পরিমাণ না কমে বা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়াও শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর জন্য রোসুভাস্ট্যাটিন গ্রুপের ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।এত শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যেতে পারে।


কোলেস্টেরল পরীক্ষা খরচ কত 


কোলেস্টেরল লিপিড প্রোফাইল টেস্ট প্যানেল এর একটি টেস্ট। যদি শুধু মাত্র কোলেস্টেরল টেস্ট করা হয়। তাহলে যেকোনো সরকারি হাসপাতালে ১৫০ টাকা এবং যেকোনো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে। এছাড়া যদি লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করা হয় তাহলে যে কোন সরকারি হাসপাতালে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং যেকোন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকার মত খরচ হতে পারে।



সর্বোপরি আমাদের শরীরের জন্য কোলেস্টেরল খুবই ক্ষতিকর। রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল এর কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং মৃত্যু হতে পারে। তাই আমাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণে রেখে চলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। 

Tags:

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)