আয়রন প্রোফাইল টেস্ট কেন করা হয়
আয়রন মানবদেহে খনিজ পদার্থের উৎপাদক হিসেবে কাজ করে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি জনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।শরীরে আয়রনের ঘাটতি চিহ্নিত করার জন্য আয়রন প্রোফাইল টেস্ট করা হয়ে থাকে । কিন্তু আমরা অনেকেই এই আয়রন প্রোফাইল টেস্ট সম্পর্কে জানিনা। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আয়রন প্রোফাইল টেস্ট কি, আয়রন প্রোফাইল টেস্ট কেন করা হয়, আয়রন প্রোফাইল টেস্টের মধ্যে কি কি টেস্ট করা হয়, আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, আয়রনের ঘাটতি কেন হয় এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায় সম্পর্কে।
আমরা আজ এই আর্টিকেলে আলোচনা করব আয়রন প্রোফাইল টেস্ট কেন করা হয়
আয়রন প্রোফাইল টেস্ট হলো রক্তের এমন একটি টেস্ট। যার মাধ্যমে শরীরে আয়রনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
আয়রন প্রোফাইল টেস্ট কেন করা হয়
শরীরে আর বি সি (RBC) বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বিভিন্ন কারণে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এজন্য চিকিৎসক আয়রন প্রোফাইল টেস্ট করতে দেয়। কারণ আয়রন প্রোফাইল টেস্টের মাধ্যমে শরীরে আয়রনের ঘাটতি জনিত কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে কিনা তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়।
আয়রন প্রোফাইল টেস্টের মধ্যে কি কি টেস্ট করা হয়
আয়রন প্রোফাইল টেস্ট হল কিছু টেস্টের সম্মিলিত পরীক্ষা।আয়রন প্রোফাইল টেস্টের মধ্যে কি কি টেস্ট করা হয় তা নিম্নে দেয়া হলো ঃ
১.Serum Iron(সিরাম আয়রন)
২.Serum Ferritin(সিরাম ফেরিটিন)
৩.TIBC(টিআইবিসি)
আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার লক্ষণ
আয়রনের ঘাটতিজনিত কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা।নিচে লক্ষণ গুলো দেওয়া হলঃ
১.শরীর দুর্বল লাগা
২.শরীরে ক্লান্তি ভাব হওয়া।
৩.শরীরে শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া।
৪.শরীরের ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
৫.শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হওয়া।
৬.হঠাৎ হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা।
৭.হৃৎস্পন্দন বা হার্টবিট বেড়ে যাওয়া।
৮.ঘন ঘন মাথা ব্যথা হওয়া।
৯.ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়
আয়রনের অভাবে শরীরে মূলত রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আর এই রক্তশূন্যতা দেখা দিলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
আয়রনের ঘাটতি কেন হয়
শরীরে বিভিন্ন কারণে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে ।শরীরে আয়রনের ঘাটতির এর কারণ গুলো নিচে দেওয়া হল ।
১.পরিমাণ মতো আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া।
২.শরীরে রক্তক্ষরণ হওয়া।
৩.প্রয়োজনে তুলনায় অতিরিক্ত শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম করা।
৪.পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ জনিত কারণে।
৫.কৃমি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায়
শরীরে আয়নের ঘাটতি পূরণ করা খুবই সহজ। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আয়নের ঘাটতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। নিচে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা দেয়া হলো।
১.গরুর কলিজা বা হাস মুরগির মাংসঃ গরুর কলিজা বা হাস মুরগির মাংসের প্রচুর পরিমাণে আয়রনের উপস্থিতি থাকে। যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
২.টুনা ফিসঃ আয়রন সমৃদ্ধ মাছ টুনা ফিস। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
৩.সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজি যেমন- পালং শাক, ব্রকলি, কুমড়োর বীজ,কচুশাক,কলমিশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
৪. ড্রাই ফ্রুটস জাতীয়ঃ ড্রাই ফ্রুটস জাতীয় খাবার যেমন- সকল প্রকার বাদাম, কিচমিচ, অ্যাপ্রিকট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা শরিরে আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
৫.ফলমূলঃ ডালিম, আপেল, কলা, জলপাই ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। যা শরীরে জন্য খুবই উপকারী।
৬.এছাড়াও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ যুক্ত খাবার রাখলে। তা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি জনিত কারণে রক্তশূন্যতা বেশি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য আয়রনের সাপ্লিমেন্ট বা শরীরে আয়রনের ইঞ্জেকশন নিতে হবে।
সর্বোপরি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। কারণ শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হতে পারে।
Post a Comment
0Comments